লাবন্য আর কৃষ্ণকলি
- জাবেদ এ ইমন ২৮-০৪-২০২৪

লাবন্যআরকৃষ্ণকলিছিলদুটিবোন
তাদেরইআজগল্পবলিমনদিয়েতুইশোন।

প্রথমপর্ব
লাবন্য
লাবন্যের ছিল রূপের ঝলক, রূপের কমতি নাই,
মুখ খানা তার উহু আহা, হাসি খানা মিষ্টি তাই।
পায়ে তাহার দারুন ছন্দ ঘুরে বেড়ায় সবখানে,
এধার ঘুরে ওধার ঘুরে, চিনতো তাকে সবজনে।

দেখতে তাকে পাড়ায় পাড়ায় পরত লোকের ভিড়.
হাসিতে তার হৃদয় কাটে ধরত মনে চিড়।
লুকিয়ে সবাই দেখতো তারে, দেখতো ঘুরে ঘুরে,
এত দেখেও মন ভরেনা, হতাশা শুধু বাড়ে।



রূপের বাহার উচ্ছলতায় ছড়িয়ে মুক্তকেশ,
যুবক যত ছেলে ছিল করিত হাপিত্যেশ।
এমন মেয়ে পেতাম যদি, যদি হত ঘরের বউ,
সুখের পায়রা বাকবাকুম, মোমাছি করিত মৌ মৌ।

সবাই শুধু চাইছে তাকে, সে চাইছে কাকে ,
তার হৃদয়ে কোন পাখিটা কুহুকুহু ডাকে।
প্রশ্ন শুনি কে কে কে? সে করবে কাকে বিয়ে ?
এরই মাঝে সে করলো বিয়ে এক রাজকুমার পেয়ে।

ভাঙ্গলো সবার হৃদয় খানি বলল সবাই হায়,
বর নিয়ে লাবন্য ওই যায়রে চলে যায়।
যাও গো ওগো রূপের কন্যা যাও গো রূপসী,
স্বামী এখন আপন তোমার আমরা হলাম ভিনদেশী।

শ্বশুর বাড়ি লাবন্যকে দেখতে সবাই আসে,
লাবন্য তার মিষ্টি মুখের মিষ্টি হাসি হাসে।
শ্বশুর বাড়িতে তার শুধু আদর আর আদর,
আদর করে শাশুড়ি-শ্বশুর, আদর করে বর।

ধন্য ধন্য করে সবাই, ধন্য বলে তাকে,
এরই মাঝে কোথায় যেন কে দু:খের ছবি আঁকে।
লাবন্য যে উড়াল পংখী উড়তে শুধু চায়,
এই বাড়ি ওই বাড়ি শুধু ছুটিয়া বেড়ায়।

স্বামী তার ঘর কুনো বৌকে কাছে নাহি পায়,
কথায় কথায় তাই মিষ্টি কথা তেতো হয়ে যায়।
রূপ বেচিয়া আর কতদিন বল সুখ যে কেনা যায়,
অবশেষে শ্বশুর বাড়ি বিদায় দিয়ে সে বাপের বাড়ি যায়।

বাপের বাড়ি এসেও তার যন্ত্রণা না কমে,
কটু কথা শুনতে হয় প্রতি দমেদমে।
ভাবছে তাই একলা মনে একলা বসে রই,
সুখ পাখিটা গেল কোথায় সুখ পাখিটা কই.

দ্বিতীয়পর্ব কৃষ্ণকলি

কালো রংয়ের কৃষ্ণকলি, রূপ যে তেমন নাই,
হাসি তার ফোটেনা কভু, আঁধার রঙের মুখখানি তাই।
লাজুক লতা পায়ে তার, কাটছে জীবন ঘরের কোণে,
মুখটি তার চুপটি সদা, বলতো কথা আপন মনে।

দু:খ তার পায়ে পায়ে, দুখের সীমা নাই ,
মা বকে, বাবা বকে, বকে আপন ভাই।
লাবন্য তার বোনটি যখন পাড়ায় পাড়ায় ঘোরে ,
কাটছে তখন সময় তার, ঘরে সকল কাজ করে।

একই মায়ের মেয়ে তবু কেন দু'রকম দুজন?
ভাবতে গেলে কৃষ্ণকলির কেঁদে উঠে মন।
মাঝেমাঝে মনটাকে তাই করে পাখির ডানা,
উড়ে গিয়ে পাড়ি দিত, ঘরের কোনের এই সীমানা।

খুলে তাহার মনের দুয়ার,
ইচ্ছে মত যেত উড়ে যেথা খুশি তার ।
ইচ্ছে মত দেখত সবুজ, দেখত ঘাসের মাঠ,
ইচ্ছে মত ঝরনা পাহাড়, ইচ্ছে নদীর ঘাট ।

ইচ্ছে হলে প্রজাপতি, ইচ্ছে হলে পাখি,
ফুলে ফুলে উড়েউড়ে, গাছের ডালে উঠত ডাকি।
হঠাৎ হঠাৎ উঁকি দেয় একটি শ্যামলা মুখ,
মিষ্টি করে হাসে, দেখে লাগে দারুন সুখ।



রাস্তা দিয়ে যাবার পথে, উঁকি দিয়ে বেড়ার ফাকে,
একটি দোয়েল শিস দিয়ে হায় ডাকে।
একদিন এক সন্ধ্যা বেলায় চুপিচুপি এসে রান্নাঘরে,
দুই হাতে তার মুখটি তখন উঁচু করে ধরে।

ভালোবাসি কত, বলব তোমায় কেমন করে,
কৃষ্ণকলি তখন লজ্জায় মরে মরে।

আমি যে এক কালো মেয়ে কেন কাঁদাও আমার প্রাণ,
অমন করে বলনা কলি, তুমি আমার কালা চাঁন।
তোমায় আমি নিয়ে যাব করে তোমায় বিয়ে,
দু:খ তোমার ভুলিয়ে দিব অনেকখানি সুখ দিয়ে।
হঠাৎ করে ভাঙলো স্বপন মা ডাকলো যখন,
ভাতটা কি পুড়েই ফেলবি ?কি ভাবছিস এখন ?
কি করে বলবে কলি কি ভাবছে সে,
তারমনে এক স্বপ্ন পুরুষ বাসা বেঁধেছে।

মনের কথা লুকিয়ে মনে স্বপ্ন আঁকে কল্পনাতে,
সুখটা তার দিবেই ধরা দু:খ শেষের সীমানাতে।

এক বিকেল বেলা কিছু মানুষ আসে তাদের বাড়ি,
সেই মানুষটাও আছে বসে, লজ্জায় আড়াআড়ি।
তার বাপকে বলল একজন কলির বিয়ের কথা,
ফাগুন মাসেই করতে চাই বিয়ের সমাধা।

সাদামাটা বিয়ে হলো কলির তাতে দু:খ নাই,
শ্বশুর বাড়ি এসে কলি নিল নিজের ঠাঁই।
স্বামী তার মনের মানুষ শ্বশুর মন্দ নয়,
শাশুড়ি তার রাগী ভীষণ,মনে লাগে ভয়।

কালো মেয়ে বলে সে শুনত কত কথা,
যখন তখন পিড়া দিত মনে পেত ব্যাথা।
হাতের পীড়ন না থাকলেও মুখের পীড়ন ছিল,
হাসি মুখে থাকত কলি, মনে কষ্ট পেলেও।

শাশুড়ি মার করত সেবা মন-প্রাণ দিয়ে,
তবুও তার ভরত না মন এত সেবা পেয়ে।
একটা সুন্দর বউ পেলে তার, দু:খ যেত গুছে,
এমন কথা বলে তার চক্ষু দুইটি মুছে।

দিন গুলো সব যাচ্ছে কলির এমনি করে,
শাশুড়ি তার হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরে।
প্রতিদিন-ই কত ডাক্তার কবিরাজ আনে
তবুও যে রোগ সারে না, রোগ ধরেছে প্রানে।

ধীরে ধীরে শাশুড়ির হায় হচ্ছে জীবন অবসান,
চোখ দুটি উঠে ভিজে কাঁদছে কলির প্রাণ।

একদিন হঠাত অনেক রাতে ডাকলো কলিকে কাছে
আজ থেকে মা সব কিছু তোর যা কিছু আমার আছে ।

মাগো তোরে গাল দিয়েছি, কষ্ট দিয়েছি অনেক,
সেই জন্যই আমার আজ কি অবস্থা দেখ।
মাফ করে দে না মা আমার মরণ কালে,
দোয়া করি তুই থাকবি ভালো সুখ সাগরের জলে।

বছর বিশেক পরে,
কৃষ্ণকলি একলা বসে ঘরে।
একলা মনে ভাবছে কলি একলা বসে রই,
থাকলো না হয় দুঃখ কিছু, তবু সুখেই বেচে রই।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।